স্বদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশে সাধারণত বৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড়; এমনকি শিলাবৃষ্টির আগমনের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাবর্ষ শুরু হয়; কিন্তু এরই মধ্যে নতুন বাংলা বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহ চললেও দেশের অধিকাংশ জায়গায় খুব কম বৃষ্টিপাত হয়েছে, এমনকি অনেক জায়গায় এখন পর্যন্ত বৃষ্টির দেখাই মেলেনি। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস, পানির ঘাটতি ও খাবার পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, বিশেষত উপকূলীয় জেলাগুলোর নদ-নদী ও জলাধারে বেড়ে যাচ্ছে লবণাক্ততার হার।
জানা গেছে, সাতক্ষীরা ও বরগুনার মতো উপকূলীয় জেলাগুলোতে এখন খাবার পানির মারাত্মক সংকট চলছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে পুকুরের মতো মিঠা পানির উৎস শুকিয়ে যাচ্ছে এবং টিউবওয়েলেও পানি দিন দিন কমে আসছে। লবণাক্ত ও দূষিত পানি ব্যবহার করার ফলে বেড়ে যাচ্ছে ডায়েরিয়া, কলেরা, আমাশয়, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, ইউরিন্যাল ইনফেকশন, চর্মরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, যৌনাঙ্গে চুলকানি, ঘা-এর মতো রোগের প্রকোপ। নারীদের মধ্যে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিচ্ছে, যা পরবর্তীতে রূপ নিচ্ছে টিউমার এবং জরায়ু ক্যান্সারের মতো রোগে।
উপকূলীয় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, গত মার্চ ও চলতি এপ্রিলে অনেক জায়গাতেই খাবার পানির তীব্র সংকট চলছে। সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দুই ইউনিয়ন ভাড়াশিমলা ও মথুরেশপুর এবং বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের দিকে তাকালে দেখা যায়, কম বৃষ্টিপাতের ফলে সেখানকার পুকুরের পানির স্তর হ্রাস পেয়েছে। এতে পুকুরের সঙ্গে সংযুক্ত ‘পন্ড স্যান্ড ফিল্টার’ অকেজো হয়ে পড়েছে।
আবার সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জের বিভিন্ন পুকুরে দেখা দিয়েছে ব্যাঙাচির আধিক্য। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য এ অঞ্চলের দশটির বেশি গ্রামের ছয় শতাধিক পরিবার পুকুরের মতো উৎস থেকেই খাবার পানি সংগ্রহ করে। অপরিষ্কার ও দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে এসব পরিবারের অনেক নারী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মাহাতাব হোসেন জানান, ইদানিং অনেক নারী ইউরিন্যাল ইনফেকশান, যৌনাঙ্গে চুলকানি এবং সাদা স্রাবের (লিউকোরিয়া) মতো অসুখ নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসছেন।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, এই সংকট মোকাবিলায় একশনএইড বাংলাদেশ প্রাথমিক পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে জনগণকে পানি সরবরাহ করছে। মাঝারি পর্যায়ে আমরা ভবিষ্যৎ জলবায়ুর গতিবিধি বিবেচনা করে পানি সংকট নিরসনে টেকসই সমাধান খুঁজে পেতে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কাজ করছি। এই জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সরকার ও সব উন্নয়ন সংস্থাকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে বিশ্বনেতারা আজ ২২ এপ্রিল ভার্চুয়াল জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। আমরা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ, যারা তীব্র পানি সংকটে রয়েছেন; তাদের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে বলতে চাই- জলবায়ু রক্ষার পদক্ষেপ যেন কেবল গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। এটি ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা নয়। এর জন্য এখন থেকেই কাজ করতে হবে। তাদের দায়িত্ব নিয়ে যুক্তিযুক্তভাবে কাজ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পায়।